শুক্রবার, ৮ জুলাই, ২০২২

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার বা মুক্তি পাওয়ার উপায়

নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে, শিশু বা বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব বিভিন্ন কারণে হতে পারে আবার এর থেকে প্রতিকার বা মুক্তি পাওয়ার উপায়ও রয়েছে। আগেই বলেছি, পুরুষ বা মহিলা সবার ক্ষেত্রেই এমন সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে, যে সকল নারীদের মেনোপজ অর্থাৎ মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাদের রিস্ক অন্যদের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে। আর পুরুষদের মধ্যে যাঁদের প্রস্টেটের অসুখ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে মূত্রথলির এমন সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার মানে হলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় বেগ পাওয়া এবং প্রস্রাব করা। এটি যেকোন ব্যক্তির প্রতিদিনকার দিন লিপিতে বিঘ্ন ঘটায় এবং ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে থাকে। তাই দ্রুত আরাম পাওয়ার জন্য ঘন ঘন প্রস্রাব হলে শুরুতে অনেকেই না বুঝে এন্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করেন যা বহু ক্ষেত্রেই উল্টো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের দিনে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আসে আবার অনেকের রাতে বেশি আসে আবার কারো ক্ষেত্রে দিন রাতে সমান থাকে। দিনে ৪-৫ বার প্রস্রাবের চাপ আসা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। তবে তার থেকে বেশি বার হলে কিন্তু চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
ন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
কেউ কেউ আবার মনে করে থাকেন ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া মানেই ডায়াবেটিস, বিষয়টি কিন্তু তাও নয়। এর পেছনে যেমন ডায়বেটিস থাকতে পারে তেমনি আরো বহু কারণ থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্লাডার যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাজ করা শুরু করে তাহলেই ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আসে। আর এরকমটা নানা কারণে হতে পারে যেমন: অ্যালকোহল সেবন, ক্যাফিন, ডায়াবেটিস, ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন Urinary Tract Infection (UTI), পেলভিক রিজিয়ানে কোন অসুবিধা, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রয়া থেকেও হতে পারে।
প্রচণ্ড পরিশ্রমের কাজ যারা করেন, ঘামেন, তারা ৫ লিটার পানি খেলে হয়ত ২ লিটার প্রস্রাব হবে যারা বিশ্রামে থাকেন বা ঘামেন না তারা ২.৫ লিটার খেলেই ২ লিটার প্রস্রাব হতে পারে তবে এক সাথে ১ গ্লাসের বেশি পানি পান করার দরকার নেই।
ঘন ঘন প্রস্রাব করার সমস্যা যদি বিশেষ করে রাতের বেলায় হয় তাহলে এটা কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে। যখন কিডনির ছাঁকনি গুলো নষ্ট হয়ে যায় তখন প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পায়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে দেখা যায়। সুস্থ কিডনি সাধারণত ব্লাড সেল গুলোকে শরীরের ভিতরে রেখে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ মূত্র হিসেবে বের করে দেয়। যখন কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন ব্লাড সেল বের হতে শুরু করে। প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়ার এই লক্ষণটির কিডনি রোগের সাথে সাথে টিউমার, কিডনি পাথর বা ইনফেকশনেরও ইঙ্গিত হতে পারে। 

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ

  • বেশি বেশি পানি পান করা একটি প্রধান কারণ
  • দুঃশ্চিন্তা, বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষাকালীন সময়ে বা ইন্টারভিউ দেয়ার পূর্বে 
  • যুবকদের পর্ণ দেখা বা উত্তেজক চিন্তার ফলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে 
  • শীতকাল বা ঠান্ডা-শুষ্ক পরিবেশে মানুষের শরীর ঘামে না, ঐ সময় অতিরিক্ত প্রস্রাব তৈরি করে কিডনী শরীরে পানি ও লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
  • কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবে অতিরিক্ত প্রস্রাব হয়, যেমন - ডায়াবেটিস, প্রস্টেট গ্রন্থির টিউমার, প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ ইত্যাদি
  • কিডনী অকেজো হবার অন্যতম লক্ষণ হল অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া
  • ব্লাডার ক্যান্সার, ব্লাডার বা কিডনিতে পাথর হলে 
  • মূত্র নালীর সংকোচন হলে ঘন ঘন প্রস্রাব বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে
  • এছাড়া এলকোহল, চা, কফি পান করাও অতিরিক্ত প্রস্রাব হবার জন্য দায়ী
  • ইনফেক্শন একটি কারণ। এটি হলে প্রস্রাবের সাথে জ্বালাপোড়া হবে। প্রস্রাব ছাড়াও জ্বালাপোড়া হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের পেলভিক এরিয়াতে বা তলপেটে জ্বালাপোড়া করছে।
  • পুরুষদের প্রোস্টেটে ইনফেকশন হলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
  • প্রস্রাবের পথে যদি কোন বাধা থাকে তাহলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে 
  • মেয়েদের গর্ভে সন্তান আসার প্রথম ৩ মাসে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে 
  • মেয়েদের পেলভিক ইনফ্লামেশন হলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে 
  • যক্ষা বা TB হলেও তলপেটে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে 
  • প্রস্রাবের থলিতে ক্যান্সার হলেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে, এমনকি রক্তও বের হতে পারে 
অনেকেই আবার ঘন ঘন প্রস্রাব হলেই আতংকিত হয়ে পড়েন ডায়াবেটিস হল কিনা এই ভেবে। আপনার আতংকিত হওয়ার মোটেই কোন কারণ নেই। আর ডায়াবেটিস হলেও চিন্তা বা ভয়ের কিছুই নেই কারণ আপনি হয়তো জানেনই না যে - ডায়াবেটিস হলে প্রথমেই আপনি ক্রমাগত এলোপ্যাথিক বা রাসায়নিক ঔষধ দিয়ে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে অভিজ্ঞ কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিন। এছাড়া ন্যাচারোপ্যাথি চিকিৎসাতেও সুফল পেতে পারেন।

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার লক্ষন

  • ঘন ঘন প্রস্রাব বেগ হওয়া 
  • প্রস্রাবের প্রচণ্ড চাপ অনুভব
  • প্রস্রাবের সময় ব্যাথা, জ্বালাপোড়া ও অসহ্য অনুভূতি
  • তল পেটে স্বাভাবিকভাবে অথবা চাপ দিলে ব্যাথা অনুভব
  • ঘন ফেনার মত অথবা দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব
  • জ্বর-কাঁপুনিসহ অথবা কাঁপুনি ছাড়া
  • বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
  • কোমরের পাশের দিকে অথবা পিছনে মাঝামাঝি অংশে ব্যাথা
  • প্রস্রাবের চাপে রাতে বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার প্রতিকার
প্রচণ্ড পরিশ্রমের কাজ যারা করেন, ঘামেন, তারা ৫ লিটার পানি খেলে হয়ত ২ লিটার প্রস্রাব হবে যারা বিশ্রামে থাকেন বা ঘামেন না তারা ২.৫ লিটার খেলেই ২ লিটার প্রস্রাব হতে পারে তবে এক সাথে ১ গ্লাসের বেশি পানি পান করার দরকার নেই।

তবে শীতে ঘন ঘন প্রস্রাব একটি সাধারণ উপসর্গ। আমাদের প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে, এখানে রোগ নির্দেশক যে লক্ষণগুলো বর্ণিত হয়েছে সেগুলো আছে কি না। এখানে উল্লিখিত লক্ষণগুলো না থাকলে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। নিচের নিয়মগুলো মেনে চললে প্রতিকার পাওয়া যাবে।
  • পরিমাণমতো পানি পান করা
  • প্রস্রাব আটকে না রাখা
  • চা, কফি পান সীমিত করা
  • অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় বর্জন করা
তবে এর ব্যতিক্রম হলেই চিন্তার বিষয়। কি কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা হচ্ছে সেটি বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রপার হোমিও চিকিৎসা নিতে হবে। ডায়াবেটিস, ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন, প্রোস্টেটে ইনফেকশন, ব্লাডার ক্যান্সার, ব্লাডার বা কিডনিতে পাথর, মূত্র নালীর সংকোচন ইত্যাদি যে কারণই দায়ী থাকুক না কেন সেটি যথাযথ ভাবে নির্ণয় করে প্রপার হোমিও ট্রিটমেন্ট নিলে ধীরে ধীরে এই সমস্যা দূর হয়ে যায়। 
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার বা মুক্তি পাওয়ার উপায় Dr. Delowar Jahan Imran 5 of 5
নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে, শিশু বা বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব বিভিন্ন কারণে হতে পারে আবার এর থেকে প্রতিকার বা মুক্তি পাওয়ার উপায়ও রয়েছে। আগেই ব...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন